শাটার গ্রাফিটিতে খুলনা শহরকে সাজানোর অভিনব প্রয়াস
শাটার গ্রাফিটিতে খুলনা শহরকে সাজানোর অভিনব প্রয়াস
আহমেদ কবীর কিশোর, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৯ | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৪:৪৪
ঢাকা কিংবা আরো দূরের কোনো শহর থেকে জন্মভূমি শহরে ভোর এ বাস থেকে নেমেই দেখলেন নিজের শহরের সবকিছুকে মোটিফ বা গ্রাফিটিতে রাঙিয়ে রঙিন সব ছবি আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছে। চোখ জুড়িয়ে গেল, মন জুড়িয়ে গেল, নিশ্চুপ রাজপথের দুধারে সারি সারি দোকানের শাটারের ওপর মোহনীয় সব গ্রাফিটি, মোটিফ, রঙ যা কেবল আপনার শহরের কথাই নানাভাবে, নানা ঢঙে বলে যাচ্ছে। কেমন বোধ হবে ভাবুন তো?
আপনি রিকশাচেপে শহর জেগে উঠবার আগে চোখ মেলে দেখে গেলেন এইসব ছবি, দেখলো আপনার রিকশা চালক। একটি চমৎকার দিনের শুরু হলো আপনাদের দুজনেরই। পথে পথে, শাটারে আঁকা সারা শহর একটা গল্প বলে গেল, সেই গল্পের মানে আপনি একভাবে, রিকশাচালক আরেকভাবে এঁকে নিলো। যে যার মতো।
নতুন কেউ এলে ডাগর চোখে দেখলো, মুগ্ধ হলো, একটা শহরের নতুন এক পরিচিতি হলো রঙে, সূর্য্যের আলোতে, সন্ধ্যার নিয়ন অলোতে!
খুলনা শহরে সাম্প্রতিক সময়ে এরকমই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন কয়েকজন তরুন প্রতিভাবান শিল্পী। খুলনার ৫৭ শের ই বাংলা রোড, আমতলায় একটা বুটিক শপের নাম নোনাভূমি। তাকে ঘিরে শিল্প সাহিত্যের সংবাদপত্রের নানা ঘরানার নানা মতের সৃষ্টিশীল মানুষের আনাগোনা, তাদের কেউ কেউ ভালোবেসে নোনাভূমিকে খুলনার শান্তি নিকেতন ডেকে থাকে! এই নোনাভূমির বন্ধ শাটারকে দিয়েই শুরু হয়েছে শাটার গ্রাফিটির নতুন এক যাত্রা। দোকানের বন্ধ শাটারের গায়ে নানা রঙে আঁকা এক একটা ছবি বলছে বাংলাদেশের কথা। দিচ্ছে অন্যরকম এক শিল্পের জন্ম লগ্নের আভাস।
গ্যালারির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে যাদের শিল্পীদের আঁকা ছবি দেখার সুযোগ ঘটবেনা কোনও দিনও, তাদের জন্যে শাটার এর ওপরে রঙের বুননে বর্ণিল সব ছবি চিত্রকলার নতুন এক ক্যানভাসে সাজিয়ে দিতে চাইছে যনে খুলনা শহরটাকে। সাধারণ মানুষেরা দোকানের বন্ধ শাটারের উপর এইসব ছবি দেখে যেমন দোকানটিকে চিনে রাখলো তেমনি শহরের নতুন এক রুপ তাদের জন্যে নতুন এক পরিচয় তৈরি করে দিলো। রঙিন শহরের এই বোধটা ছড়িয়ে গেল, সার্বজনীন হলো। শহরের অলি গলি হয়ে উঠলো চিরকালীন উৎসবের।
দোকানের শাটারের ওপর একটা ক্যানভাস তাই গণমানুষের।
শহরের মুটে মজুর যে মানুষগুলোর বিনোদন লাভের কোন সুযোগ ই নেই, সেই মানুষগুলোর জন্যে দোকানের বদ্ধ শাটারগুলো এক সার্বজনীন রুপ নিয়ে খুলবে, বন্ধ হবে। যখনই বন্ধ তখন তার শিল্প উম্মুক্ত হলো।
বন্ধের দিন গুলোতে আরেক রুপ ধারণ করলো দোকানের সারি সারি শাটারের বিচিত্র চিত্রে। হ্যাঁ, পৃথিবীর কিছু শহরে এমন কাজ হয়েছে বৈকি কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রথম।
এই কাজ একার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই এটির জন্যে চাই ডেডিকেটেড টিম মুভমেন্ট এর মতো একটি পদক্ষেপ। শাটার আর্ট দিয়ে রঙে রঙে সজীব জীবন্ত শহর আর সাধারণ মানুষের জন্যে স্বপ্নটা তাই দল বেঁধেই দেখছেন শিপার, মনি মাঝির মতো খুলনা চারুকলার ব্যাচ ৯৯ আর০২ ব্যাচের কয়েকজন তরুণ। দিন কতকের মধ্যেই ইমরোজ, স্বন্দ্বীপ, উৎসব, উপল দলে জুড়ে গেছেন। তারােই এখন দিন রাত জেগে রাঙিয়ে তুলেছেন নোনাভূমির শাটারগুলোকে। সেখানে নোনাভূমি ক্যাফে, নোনাভূমি বুটিক, নোনাভূমি পিউরিটি শপ এক ছাদের নিচে সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে শুরু করলো নতুন এক অভিযাত্রার। অভিবাদন শীর্ষক নতুন এক আর্ট মুভমেন্ট এর। এখন ধীরে ধীরে তাদের আঁকাআঁকির আওতায় চলে আসবে আরও বহু বন্ধ শাটার।
একটা নগরীর দোকানের শাটার পরবে আর একটা আর্ট শো শুরু হবে?
বন্ধ দিয়েই যার শুরু? হতেই পারে। অবশ্য তার মানে এই নয় যে দোকান বন্ধ করে রাখতে হবে!
বরং নতুন ধরনের এই শাটার আর্ট শো যে কোন দোকানের বাইরের সৌন্দর্য এর এক বোধ তৈরি করবে তার টানে দোকানে ভিড়বে খদ্দের। দোকান মালিকের সৌন্দর্যপ্রীতির প্রশংসা করবে সবাই। রাস্তার পাশে সারিসারি দোকানের শার্টারে রঙিন সব আঁকিবুকি, মোটিফ, আল্পনা, গ্রাফিটি, নতুন ধরনের আবেশ তৈরি করবে নগরবাসীর মনে। সবার চোখে রঙিন এক সর্বজনীন ছবি হয়ে ঐক্যের কথা বলবে।
কিংবা এই শহরের রিকশাওয়ালা, মুটে মজুর, সাধারন মানুষের তো গ্যালারির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম গুলোতে প্রবেশাধিকার নাই। এই বন্ধ হয়ে যাওয়া শাটারের ক্যানভাসে রঙিন সাদা কালো ছবিগুলো তাদের জন্যে হোক। তারা ছবিকে ভালোবাসতে শিখুক। তাদের শ্রমেই তো বেঁচে থাকে মানুষ, বেঁচে থাকে দেশ।
হতে পারে লোকজ কিংবা প্রাচ্যের পাশ্চাত্যের মিলন কিন্তু একটা রঙিন ছবি হয়ে নগরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে।
খুলনা, একটি ট্যুরিজম এর অপার সম্ভাবনার শহর অথচ শহরে পর্যটক দেখা যায় না বললেই চলে। ট্যুর অপারেটর রা ট্যুরিস্টদের যশোর হয়ে বিমান থেকে নামিয়ে সরাসরি চলে যান সুন্দরবনে কিংবা শহর থেকে দূরে কোন স্থাপনায়। শহর এ তাই ট্যুরিস্টদের আকর্ষণের নাগরিক কোনো আয়োজন নেই বললেই চলে, অথচ এই শাটার আর্টগুলোকে কেন্দ্র করে নতুন ঘরানার ট্যুরিস্ট আকর্ষণের নবযাত্রা শুরু হতে পারে। এই আর্টগুলো কে কেন্দ্র করে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে হতে পারে নতুন মেলার আয়োজন, ঘরে তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র ট্যুরিস্টদের জন্যে ডালা সাজিয়ে বসতে পারে যে কেউ।
এ হতে পারে খুলনার নতুন হয়ে ওঠা কিংবা স্বকীয়তা তৈরির একটি চেষ্টা, একটি মুভমেন্ট।
নোনাভূমি'র অভিবাদন আর্ট মুভমেন্ট তাই খুলনার বুকে নতুন এক পধচলার ডাক।
নাগরিক নতুন এক ক্যানভাসে, নতুন করে গল্প বলার প্রয়াস।
সেই গল্প প্রাণ পাবে অন্ধকারে, বন্ধে, আলোতে, নিয়ন কিংবা রৌদ্রের উত্তাপে।
কিংবা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এইসব শাটার'র সামনে, এক চিলতে আশ্রয় এর নীচে ঠাই নিতে নিতে, এইসব শাটার'র আঁকিবুকি দেখে কোনো কোনো যুগল হয়তো উষ্ণতার নতুন গল্প খুঁজে নেবে। নিক।
(ঢাকটাইমস/২৯ডিসেম্বর/একেকে/কেএস)
http://www.dhakatimes24.com/2017/12/29/63052/%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%AC-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B8
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন